শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
জমে উঠেছে ফরিদপুর ২ আসনের উপ-নির্বাচন

জমে উঠেছে ফরিদপুর ২ আসনের উপ-নির্বাচন

আর টি হাসানঃ
সালথা, নগরকান্দা ২ উপজেলাসহ সদরপুর উপজেলার ১ টি ইউনিয়ন কৃষ্ণনগর নিয়ে গঠিত ফরিদপুর ২ আসন। জাতীয় সংসদের উপনেতা সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযুদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশন আসনটি এরই মধ্যে শূন্য ঘোষণা করে তফসিল ঘোষনা করেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ২ পুত্র। নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জ্যেষ্ঠ পুত্র আয়মন আকবর চৌধুরী, কনিষ্ঠ পুত্র কৃষিবিদ শাহদব আকবর , এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জুয়েল চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়াসহ বাংলাদেশ সেনা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মেজর (অবঃ) আতমা হালিম।

সেই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী ওয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমান মিয়া। এছাড়া দলীয় সম্মতি পেলে প্রার্থী হতে পারেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ।

ফরিদপুর-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৫। এ আসনে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন বাড়লেও দুই উপজেলার নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। এদিকে আয়মন আকবর চৌধুরীর নির্বাচনে অংশ গ্রহনের কথা লোকমুখে শোনাগেলেও নির্বাচনীয় মাঠে তার তেমন কনো গনসংযোগ বা প্রচার প্রচারনা চোখে পড়ে নি। এদিকে প্রচারনায় মাঠ গরম করে রেখেছেন কৃষিবিদ শাহদব আকবর চোধুরী। প্রয়াত সংসদ উপনেতার ইমেজ ব্যবহারের পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ইতিমধ্যে দলীয় নমিনেশন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বর্তমানে শাহদব আকবরের সমর্থনে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে রয়েছে তার পোস্টার ও ব্যানার। এরই মধ্যে তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগও করেছেন।

শাহদব আকবর বলেন, আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল আমি যেন এ আসন থেকে নির্বাচন করি। মা দীর্ঘদিন এই এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার নানা উন্নয়ন করেছেন। আমি তার ইচ্ছা অনুযায়ী উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ও নির্বাচিত হলে মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে এলাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো।

তিনি আরও বলেন, এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে অতীতে ছিলাম, বর্তমানে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।

জুয়েল চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন। আর নির্বাচিত হলে প্রথমেই এ আঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে ফরিদপুরের এ আসনকে আধুনিকায়নসহ দুই উপজেলা ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করবেন তিনি।

এছাড়া উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আতমা হালিম ও জামাল মিয়া। এরই মধ্যে নির্বাচনীয় প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন এই দুই প্রার্থী।নির্বাচনীয় প্রচারনার মাঠে আরো দেখা গেছে কজী আব্দুস সুবাহান, তরুন নেতা সাব্বির রহমান। তারা দুজনেই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।

দলীয় প্রার্থীদের ভিড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা খুব একটা চোখে না পড়লেও এবারের উপ-নির্বাচনে নতুন মুখ হিসেবে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী ওয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমান মিয়া। এরই মধ্যে নিজের জন্মস্থান বল্লভদী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় কর্মী সমর্থকদের মাধ্যমে লিফলেট, পোস্টারে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন এই ব্যাবসায়ী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে শক্তভাবেই লড়বেন বলে আভাস ও দিচ্ছেন।

রোমান মিয়া বলেন, সাধারণ মানুষ বিগত সময়ে প্রবিন রাজনীতিবিদ সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও বিরোধী দলীয় নেতা ওবায়দুর রহমানকে ভোট দিয়েছে। উনারা আমাদের রাজনৈতিক অভিবাবক। এদের অবদান অতুলনীয়। জনগন আমাকে সর্মথন দিলে তাদের এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবো। মানুষ চায় একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও কর্মঠ ব্যক্তি। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণই আমার লক্ষ্যে।

তিনি আরো বলেন, যুবসমাজ কে মাদকের হাত থেকে বাচাতে মাদক মুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো। আমার এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। উপজেলা সদরের সঙ্গে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করাই হবে আমার আরেকটি কাজ। পাশাপাশি নগরকান্দা উপজেলার মূল ভূখণ্ডকে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা, বাল্যবিয়ে রোধ, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবো। এছাড়া কৃষি ও কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে উৎপাদিত ফসলের একটি পরিকল্পিত ও সুন্দর বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলে কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে চাই।

এদিকে, সরকারদলীয় প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। তার ব্যক্তিগত প্রস্তুতি থাকলেও দলের নির্দেশে প্রার্থী হওয়া বা না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। বিগত সময়ের বিএনপির প্রার্থী শ্যামা ওবায়েদ
জানান নির্বাচনে লড়াই করার জন্য শক্তি ও সামর্থ্য আছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি প্রার্থী হবেন না।

উল্লেখ্য ফরিদপুর -২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সংসদ সচিবালয় এবং ২৬ সেপ্টেম্বর আসনের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১০ অক্টোবর, বাছাই ১২ অক্টোবর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার ১৯ অক্টোবর। ভোট গ্রহণ হবে ইভিএমে ৫ নভেম্বর । এ নির্বাচনে ফরিদপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved 2018 Banglarnayan
Design & Developed BY ThemesBazar.Com